December 23, 2024, 7:47 am

আইসিটিতে সফল ব্যক্তি হয়েও সরকারের নজরে আসেননি বরগুনার সোহেল।

এম.এস রিয়াদ, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : Monday, June 28, 2021,
  • 247 Time View

 দেশ এখন যুগের তালে বিশে^র উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর সাথেই রয়েছে। আদি যুগে কবুতর ছিলো দুর দুরন্তের খবর পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম। আবার রাজ্যে রাজা গুরুত্বপূর্ণ খবর সর্বসাধারণকে জানাতে ব্যবহার করতেন ঢাক। যা বাজিয়ে খবর শোনানো হত। ধীরে ধীরে এলো টেলিযোগাযোগের একটি অন্যতম মাধ্যম।

 

 

 

যে যন্ত্রটির নাম দেয়া হয় টেলিফোন। তারের সংযোগ ও টাওয়ার ব্যবহার করে কোড নম্বর সম্বলিত একটি নম্বর নিয়ে দিতো বিশে^র এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এটি দ্বিতীয় ধাপের যোগযোগ মাধ্যম। আজ বিশে^র গবেষণা ও ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) সেক্টরের সহযেহিতায় এক অনন্য শিখায় পৌঁছে দিয়েছে আমাদের। অথচ এর পেছনে কারোনা কারো অবদান অবশ্যই রয়েছে।

 

 

 

এগিয়ে যাচ্ছে টেকনিক্যাল সেক্টর। আর এই আইটি সেক্টরকে আরও বেগবান করার লক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে ইনফো সরকার- ২ এর আওতাধীন গড়ে তোলা হয়েছে উপজেলা টেকনিশিয়ান। যারা বিভিন্নভাবে এ সেক্টরটিকে সাধারণ মানুষের সেবায় দ্রুতগতি ও ক্লিনিং রাখতে চেষ্টা করে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বেশ পটু ও দক্ষতার পরিচয় রেখেছে। তবুও পায়নি কোন মূল্যায়ন।

 

 

জোটেনি কোন স্থায়ী চাকুরি। নিয়মে থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে নিতে হবে রাজস্ব খাতে। এত দক্ষ থাকা সত্তেও ঝড়ে পড়তে হয়েছে অবেলায়। যখন কোন চাকুরিতে আবেদন করার মতো অবস্থা কিংবা বয়স কোনটিই থাকেনা। সরকারের সুনাম কুড়াতে এই টেকনিশিয়ানরাই ছিলো একমাত্র অস্ত্র। আজ তারা অবহেলিত।

রয়েছে অবহেলার চাদরে মোড়ানো অবস্থায়। ঘরের কোনই একমাত্র তাদের বর্তমান স্থান। এমনই একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান বরগুনার সোহেল। সোহেল বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবদুল খালেক ও আকলিমা দম্পতির বড় সন্তান।

এই দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে পিতা-মাতার বুক ভরে গর্ব বড় সন্তান সোহেল যেনো সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ স্বরুপ। সোহেল ৭ম শ্রেণিতে পড়ে একই ক্লাশ, নিচের ক্লাশ ও উপর ক্লাশের শিক্ষার্থীদের গনিত কষাতেন। তার ভালো লাগতো অকৃতকার্য শিক্ষার্থী কৃতকার্য দেখতে। কৌশলগত দীক্ষা দিতে সোহেল বেশ পটু ছিলেন।

সহজভাবে বুজাতে সক্ষম ছিলেন বিএসসি সোহেল। সোহেল কেওড়াবুনিয়া সেকেন্ডারী স্কুল থেকে ২০০৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তির্ণ হন। পারিবারিক দৈন্যদশার কারণে দীর্ঘ দুই বছর সময় অতিক্রম করে হলেও বন্ধু মহসিনের বাড়িতে থেকে কর্মস্থলের মাত্র ২৩ দিনের ছুটি নিয়ে ২০০৮ সালে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইসএসসি পাস করেন। পরে একই প্রতিষ্ঠান থেকে সেকেন্ড ডিভিশন নিয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন।

তবে মনের মাঝে এক কঠিন অধ্যবশায় লালন করেছিলেন সেদিন; যেদিন বাবার সাথে ঘুরতে এসেছিলেন বরগুনা শহরে। একটি কম্পিউটারের দোকান তার মনের মাঝে এক ভিন্ন আশা জাগালেও আজ নিভিয়ে দিয়েছে আশার প্রদীপ। যে সোহেল ২০০৮ সালে মাত্র ৩ মাসের অফিস অ্যাপ্লিকেশন কোর্স করে প্রাক্টিস চালিয়েছেন নিজেকে দক্ষ কম্পিউটার টেকনিশিয়ান করে গড়ে তুলতে। জীবনের অনেকটা সময় পাড় করেছে শহরের হাজি কম্পিউটার, শামিম ফটোস্ট্যাট ও ইভান বিজনেস সেন্টারে। কম্পিউটারের কর্ম দক্ষতা তাকে নিয়ে গিয়েছে দুর থেকে বহু দুরে।

তবুও যেনো কী একটা কমতি থেকেই গেছে। ২০১১ সালে চাকুরি করেছেন এফএম কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাই স্কুলে। এরপরে ২০১২ সালে বেকারত্ব দুর করতে বর্তমান সরকারের এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেয়া ন্যাশনাল সার্ভিস এ চাকুরি হয় সোহেলের। মাত্র দুই বছর মেয়াদী এ চাকুরিতে সময় পাড় করেছেন বরগুনা শহরের যুব উন্নয়ন ও কম্পিউটারের দক্ষতায় নিয়ে নেয়া হয় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। যেখানে শুরু হয়েছিলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে ইনফো সরকার- ২ এর আওতাধীন উপজেলা টেকনিশিয়ানের কর্মক্ষেত্র। মেয়াদ শেষ হলেও বাড়ানো হয় প্রকল্পের কার্যদিবস।

যেখানে দেশের হাজারো দক্ষ টেকনিশিয়ানরা কাজ করেছে। এগিয়ে দিয়েছে আইটি সেক্টরকে আরেকটু সামনের দিকে। অথচ এগিয়ে নেয়া এই টেকনিশিয়ানদের পিছু নিতে হয়েছে তার দ্বিগুন। চাকুরি স্থায়ী হওয়ার আশায় ২০১৬ সালে হাইকোর্টে মামলা করেন এই প্রকল্পের টেকনিশিয়ানরা। সরকারের দেয়া নানামুখি আশ^াস ও আশার বাণিতেই যেনো স্বপ্ন বুনে রেখেছেন আজও। সোহেল পরবর্তীতে কাজ করেছেন ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে।

এর মধ্যে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম, হালনাগাদ, পরিসংখ্যানের কৃষি শুমারি, ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজ প্রজেক্ট এ। করেছেন কিন্ডার গার্টেন ছাড়াও বরগুনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা। বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কম্পিউটারে কাজ করেছেন ইন্টারনেট নিয়ে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেকর্ড রুমের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর।

 

দিয়েছেন পাঁচটি সরকারি পরিক্ষা। প্রথমটির ইন্টারভিউ কার্ড না আসলেও পরের চারটিতে ভাইবার সম্মুখিন হয়েও দেখেননি চাকুরির মুখ। অথচ দক্ষ মানুষগুলো এভাবেই ঝড়ে যাচ্ছে অবহেলায়। হতাশা আর দৈন্যদশা একসময় বুকটাকে খাড় করে দেয়। নিঃস্ব হয়ে আশাহীন ভাষা নিয়ে পড়ে থাকতে হয় এমন চোখের আড়াল হওয়া দক্ষ জনগোষ্ঠীকে।

আজ কোনমতে দিন পাড় করছে এমনসব দক্ষ কম্পিউটার টেকনিশিয়ান। সোহেল বর্তমানে একটি কম্পিউটার কম্পোজ দোকানের মালিক। পারিবারিক জীবনে সোহেল এক কন্যা সন্তানের জনক। বয়স হয়তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। টেকনিশিয়ান পদ ফিরে পাবেন; এমন আশা বুকে বেঁধে আজও সরকারের মুখপানে তাকিয়ে সোহেলের মতো হাজারো কম্পিউটার টেকনিশিয়ান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71